Augrodut Fusion
Program
রসায়ন
সাব্জেক্ট চয়েস যতটা না ভর্তিপরীক্ষা নির্ভর, তার চেয়েও বেশি প্যাশন নির্ভর। কোন বিষয়ের প্রতি দুর্বলতা, আবেগ ও নিষ্ঠাই প্রাথমিকভাবে নির্ধারন করবে, ভবিষ্যতে ঐ বিষয়ে তুমি কতোটা শাইন করবে।
আমাদের সময় ভার্সিটিতে ৪ টা ইউনিট ছিলো। এ ইউনিটের অধীন ভৌতবিজ্ঞানের বিষয়গুলোর মধ্যে রসায়ন থাকতো প্রথমে। আর এখন ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়গুলোর সাথে ভৌতবিজ্ঞানকে নিয়ে আসায়, “বাঙালি” বাস্তবতা মেনে এটার অবস্থান ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়গুলোর পরে।
রসায়ন বিভাগের ৪টি প্রধান শাখা হচ্ছে, ১) ফিজিক্যাল ক্যামিস্ট্রি, ২) ইনঅর্গানিক ক্যামিস্ট্রি, ৩) অর্গানিক ক্যামিস্ট্রি ও ৪) এনালাইটিক্যাল ও এনভায়রনমেন্টাল ক্যামিস্ট্রি। উপরোক্ত শাখা ও এর বাহিরের প্রধান প্রধান কোর্সের মধ্যে আছে, থার্মোডায়নামিক্স, ইলেক্ট্রোক্যামিস্ট্রি, ক্যামিকাল কাইনেটিক্স, নিউক্লিয়ার ক্যামিস্ট্রি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যামিস্ট্রি, স্পেক্ট্রোস্কোপি, কম্পিউটেশনাল ক্যামিস্ট্রি, ক্রোমাটোগ্রাফি, কোয়ান্টাম ক্যামিস্ট্রি ও স্ট্যাটিস্টিক্যাল মেকানিক্স, পলিমার ক্যামিস্ট্রি, এনভায়রনমেন্টাল ক্যামিস্ট্রি, ক্রিস্টালোগ্রাফি, বায়োইনর্গানিক ক্যামিস্ট্রি, বায়োক্যামিস্ট্রি, মেডিসিনাল ক্যামিস্ট্রি, গ্রীনক্যামিস্ট্রি, ন্যানোক্যামিস্ট্রি ও ন্যানোটেকনোলোজি ইত্যাদি। রসায়ন বিজ্ঞানের আধুনিকতম সকল কোর্সের সমন্বয়ে প্রণীত এ বিভাগের আপ-টু-ডেট সিলেবাস তোমাদের দিবে রসায়নের সার্বজনীনতা, দিবে এখান থেকেই ফিজিক্স, বায়োলজি, মলিকুলার বায়োলজি, বায়োক্যামিস্ট্রি, ফার্মেসি, নিউক্লিয়ার সায়েন্স ও ন্যানোসায়েন্সসহ বিজ্ঞানের আধুনিকতম শাখাগুলোতে সুইচ করার সুযোগ।
ক্যারিয়ার নিয়ে বলতে গেলে বলতে হয়, রসায়নে পড়ে তোমার থাকবে দেশ বিদেশে মেলে ধরার সুযোগ। রসায়নে পড়াশোনা করে অনেকেই আছেন যারা এম এস শেষ করার আগেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরীতে জয়েন করে ফেলেন। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রি, ফার্মেসি, পেইন্ট ইন্ডাস্ট্রি, সিমেন্ট, রড ইত্যাদি ইত্যাদি ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে আমাদের অসংখ্য বড়ভাই ও বন্ধু কাজ করে যাচ্ছেন/যাচ্ছে।
আর বিদেশে বিভিন্ন ল্যাবে পিএইচডি, এটা আসলেই এ ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্টদের জন্য মামার বাড়ির মুড়ির মোয়া। এ ডিপার্টমেন্টের অসংখ্য শিক্ষার্থী আমেরিকা, ইউ কে, জাপান, ইটালি, ফ্রান্স, কোরিয়া, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, কানাডা, ফিনল্যান্ড, সুইডেনসহ বিভিন্ন দেশের উন্নত ল্যাবে হাই ফান্ডিং এ ফুল স্কলারশিপ নিয়ে লেখাপড়া ও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। এঁদের মধ্যে বেশিরভাগই বিদেশেই সেটেল হচ্ছেন। এই ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট এই ডিপার্টমেন্টের টিচার হয়েও এখানকার চাকরি ছেড়ে পাড়ি জমাচ্ছেন বিদেশের বিভিন্ন আধুনিক ইউনিভার্সিটিতে, যেটার সংখ্যা নেহাতই কম নয়, বরং অনেক!!
সর্বপরি আবারো বলছি, সাবজেক্ট চয়েস যতটা না মেধাক্রমের ব্যাপার, তার চেয়েও বেশি প্যাশনের ব্যাপার। পছন্দের সাবজেক্টে ভর্তি হলে ভালো করার যতটা সুযোগ থাকবে, অপছন্দের সাবজেক্টে বাবা-মার চাপ কিংবা বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ডের চাপে ভর্তি হলে ততোটাই খারাপ করার সুযোগ থাকে। বাস্তবত হল, পড়াশোনা করে ভালো একটা চাকরি পাওয়া, এমন একটা সাবজেক্টে পড়া যেটা হবে ভার্সাটাইল, যেটা থেকে সুইচ করা যাবে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায়।
যারা এবার ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছ, তাদের আবারো অভিনন্দন।‘বিশুদ্ধ বিজ্ঞানচর্চা’ যাদের প্যাশন, যারা ভার্সাটিলিটি পছন্দ করো তারা ক্যামিস্ট্রিকে চয়েসে রাখতে ভুল করোনা। আর যারা ওয়েটিং থেকে বাধ্য হয়ে এ বিভাগে ক্যামিস্ট্রি পড়তে আসবে, তোমরা যদি এখানকার ক্লাস-ল্যাবগুলো ভালোভাবে করো আর অন্তত পরীক্ষার আগের সময়টুকু ভালো করে পড়, তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ একমাত্র ভাগ্য (সৃষ্টিকর্তা) ছাড়া কেউ ঠেকাতে পারবে না, ইন শা আল্লাহ...
লেখাঃ মো মাহবুবুল আলম
রসায়ন বিভাগ
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
(এম এস (থিসিস) ২য় সেমিস্টার রিসার্চ স্টুডেন্ট)